।।১।।
সোঁদা মাটির সুগন্ধ নিয়ে শব্দ-শ্রমিক এ মন
গেঁথেছিল একদা কবিতার বহুতল ভবন
কখনও জানালা দিয়ে দেখেছিল বেওয়ারিশ
কুকুরদের ভাদ্রের লীলাখেলার বেহায়াপণা
কখনও কবিতার খোলা ছাদে দাঁড়িয়ে কেবল
আকাশ দেখা, স্বপ্নের কুসুমে মালা গাঁথা নিত্যনতুন।
রোমান্স-রোমন্থনেই যে কেবল কেটেছিল কাল
এমনতো নয় আদৌ বরঞ্চ প্রেম ও প্রতিবাদ ছিল
একই অভিন্নতায় উচ্চারিত, একই সুরে বাঁধা ।
রুদ্ধ শহরে যুদ্ধ দেখেছে রক্ত নদীর তীরে দাঁড়িয়ে
কিশোরিক কষ্টে দেখেছে জীবন-মৃত্যুর পাঞ্জা খেলা
মেঘে ঢাকা সূর্যের শৌর্য দেখেছে মাঘের শেষ প্রহরেই।
প্রেম ছিল স্বদেশের প্রাত্যহিক এক সবুজাভ অস্তিত্বের প্রতি
আর প্রতিবাদ ? ছিলো তাদের প্রতি যারা সবুজকে করেছিল ধূসর
এখনও দেখি ধোঁয়াটে মানুষেরা অস্পষ্ট করে বিবেকের মাঠ
মাঝে মাঝে চাবুক দিলেও জাগে না চিত্ত কোন কুম্ভকর্ণের
বেহিসেবি বিত্তের আস্ফালনে বিক্ষত হয় মানবেতর জীবনে মানবতা
অঝোর ধারায় কেঁদে যায় কেবল দুঃখে দগ্ধ মানবকুল।
।।২।।
অতঃপর এখন সেই সোঁদামাটির গন্ধে অন্ধকারও আলোকিত
নির্বাক হয়ে শুনে যাই বাইরের কত শত কোলাহল, গান এবং শ্লোগান।
চিৎ হয়েই শুয়েছিলাম বোধ হয় চিৎকারেই ঘুম ভাঙলো অকষ্মাৎ
শুনি ফেলে আসা কতিপয় মানুষের সম্মিলিত ধ্বণি মাঝে মাঝে
বাঁচাও বাঁচাও বলে জীবনের মোহে ব্যাপৃত দেখি মানবকুল
জানেনা তারা বাঁচাতে-মরাতে ব্যবধান কেবল নিঃশ্বেসিত নিঃশ্বাসের ।
এখনও দেখি , বন্ধু আমার প্রবীণ ও প্রখ্যাত এক বাচিক শিল্পি
হেঁটে যান সাবধানে, পাছে ঘুম যেন না ভাঙ্গে কবরের পাশ দিয়ে
বিশুদ্ধ উচ্চারণে সুরা পাঠ করেন , নীচু গলায় নিতান্তই ধীরে ধীরে ।
জানেন না আদৌ তিনি ঘুম ও জাগার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসেছি কবেই
এখন কেবল রুদ্ধবাক অস্তিত্বে শুনে যা্ওয়া নিরন্তর অন্তর-কথা
বন্ধ চোখের অন্ধকারেই দেখে যাওয়া জননীর মতো সেই একদা ধরণীকে।
চমকে থমকে যান শিল্পি বন্ধু , কল্পনায় চলে কথোপকথন , তাঁতে-আমাতে
ভিন্ন বিশ্বের বাশিন্দা তিনি এবং আমি , তফাৎ ততটাই যতটা দিনে রাতে।
১৫ই সেপ্টেম্বর ২০১৬, ম্যারিল্যান্ড
Copyright@ anis ahmed