গলির কিংবা গ্লোবের গল্প

প্রিয় পরিচিত গলিটা আমার দিনে দিনে হচ্ছে সরু
সারমেয়র সংখ্যা শনৈ শনৈ বেড়েই চলেছে
ঘেউ ঘেউ শব্দে স্বপ্ন দেখা তো দূরের কথা
চোখের পলক আজকাল এক করাই ভার।
নির্দোষ শৈশব এখনও বহন করি মনে মনে
তাই আজন্ম কুকুর-ভীতি মুক্ত নই আমি।

একদা এই গলিতেই শুনেছি বাঁশির মধুর সুর
মসজিদের আজান , গির্জার ঘন্টা , মন্দিরের কাঁসর ,
কোলাজ ধ্বনির মতোই কল কল করে বয়েছে প্রাণে
ঈদের সেমাই , পূজোর প্রসাদ ভরিয়েছে মন আমার ।
নজরুল-রবীন্দ্রনাথ হাত ধরাধরি করে হেঁটেছেন এই গলিতে
গলাগলিতে বিগলিত হয়েছে মনুষত্ব নিজ মহিমায় ।

এখন তাঁরা, সেই কবিদ্বয় , এবং অন্য কবিও অকবি
পাছে কারও বিশ্বাসে করেন আঘাত, সেই শঙ্কায়
করাঘাত করেন না কারও দ্বারে. হাঁটেন না গলির ধার ঘেঁষেও।
অবৈধ বসতকারিরা এখন পাঁচিল তুলেছে নিশ্ছিদ্র এতটাই
যে আঁচিলও ডিঙ্গোতে পারে না সেই দেওয়ালটুকু
কবিরাতো রক্ত-মাংসেরই মানুষ, এহেন বিভাজনে বিরক্ত বরাবর।

সুবোধ বালকেরা এখন ঊধাও ,পান্ডাদের প্রাধান্যে বিব্রত বিবেক
অবরুদ্ধ বিশ্বে রুদ্ধ বাঁশি, পাখির কিচিরমিচির নয়, ঘৃণার কিরিচ
এখন উদ্ধত অহঙ্কারে উদ্যত সর্বত্রই, বাদ যায়নি এই পুরোনো গলিটাও
যেখানে সেদিন অবধি দ্বৈত সঙ্গীত গাইতেন সুফি ও বৈষ্ণবীরা বিরামহীন
উভয়ই এখন উধাও হলেন, ভিন্ন মেরুর তান্ডব নৃত্যে তটস্থ সকলেই
চলচ্চিত্রের মতো বর্তমান এই চালচিত্রটা মসৃণ নয় মোটেই ।

সেই প্রিয় পরিচিত গলি ও গ্লোব ক্রমে ক্রমে সংকুচিত হয়ে আসে
মানুষ নিষ্পেষিত প্রাচীরের চাপে, পরিণত হয় অপরিণত লাশে।

২১শে জুন ২০১৬, ম্যারিল্যান্ড
Copyright@ anis ahmed

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *